গ্রেপ্তার এড়িয়ে যেভাবে রাত কাটান বিএনপির নেতা-কর্মীরা

গ্রেপ্তার এড়িয়ে যেভাবে রাত কাটান বিএনপির নেতা-কর্মীরা

গ্রেপ্তার এড়িয়ে যেভাবে রাত কাটান বিএনপির নেতা-কর্মীরা
গ্রেপ্তার এড়িয়ে যেভাবে রাত কাটান বিএনপির নেতা-কর্মীরা

নিজস্ব প্রতিবেদক: পাবনার ঈশ্বরদীতে গ্রেপ্তার এড়াতে বাড়ি ছেড়ে মাঠে রাত কাটাচ্ছেন বিএনপির নেতা-কর্মীরা। হরতাল-অবরোধ কর্মসূচির ভিডিও ফুটেজ দেখে বাড়িতে পুলিশ অভিযান চালাচ্ছে বলে দাবি করেছেন পৌর যুবদলের আহ্বায়ক জাকির হোসেন জুয়েল।

জাকির হোসেন জুয়েল বলেন, ‘গ্রেপ্তার এড়াতে ২০ দিন ধরে আমি বাড়িছাড়া। বাড়ি থেকে প্রায় নয় কিলোমিটার দূরে গ্রামের একটি পরিত্যক্ত মুরগির ফার্মকে রাত্রীযাপনের স্থান হিসেবে বেছে নিয়েছি। মুরগির বিষ্ঠার দুর্গন্ধের মধ্যেই আমার সঙ্গে আরও কয়েকজন নেতাকর্মী রাত কাটাচ্ছেন।’

রোববার শহরের কয়েকটি গ্রাম ঘুরে দেখা যায়, গ্রেপ্তার এড়াতে ধান কেটে নেওয়ার পর ফাঁকা মাঠে প্লাস্টিকের পলিথিন টাঙিয়ে অনেক নেতাকর্মী রাত্রী যাপন করছেন। আবার কেউ আশ্রয় নিয়েছেন মাঠের শ্যালো মেশিন ঘরে। আবার কেউ রাত কাটাচ্ছেন কলাবাগানে বাঁশের তৈরি মাচাংয়ে।

পৌর বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক আমিনুর রহমান স্বপন বলেন, তিনি কয়েকজন কর্মী নিয়ে কখনো কলাবাগানে, আবার কখনো জঙ্গলে দিন-রাত কাটাচ্ছেন।

এদিকে মাজদিয়া, ইলশামারী, গোকুলনগর, সেখেরচক ও সাহেবনগর সাঁড়া ইউনিয়নের পদ্মা নদীর আশপাশের মাঠগুলোতেও গ্রেপ্তার এড়াতে অসংখ্য নেতা কর্মী দিন-রাত কাটাচ্ছেন।

পুলিশের পক্ষ থেকে অবশ্য বলা হচ্ছে, নাশকতার পরিকল্পনা করতেই তাঁরা রাতে মহাসড়কসংলগ্ন পরিত্যক্ত মুরগির ফার্ম, কলাবাগান কিংবা ধানখেত বেছে নিয়েছেন।

ঈশ্বরদী বিএনপির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, উপজেলার ১টি পৌরসভা ও সাত ইউনিয়ন ছাড়াও ওয়ার্ড পর্যায়ের বিএনপির নেতা-কর্মীদের বাড়ি বাড়ি দিন-রাত সমান তালে তল্লাশি করছে পুলিশ।

পুলিশের তল্লাশির মুখে নেতাকর্মীদের কেউ বাড়িতে থাকতে পারছেন না। কেউ আত্মীয়স্বজনের বাড়িতে আশ্রয় নিলে পুলিশ সেখানেও হানা দিচ্ছে। আবাসিক হোটেল, ছাত্রাবাসগুলোতেও নিয়মিত তল্লাশি করা হয়।

ফলে বাধ্য হয়ে নেতাকর্মীরা গ্রামের কলাবাগান, ধান কাটার পর ফাঁকা মাঠ, মাঠের শ্যালো মেশিন ঘর ও পরিত্যক্ত মুরগির ফার্মগুলোতে রাত যাপন করছেন।

আলাপে জানা গেল, নিজেদের পুরোনো স্মার্টফোন ও নম্বর বদলে ফেলেছেন এই নেতা-কর্মীরা। প্রযুক্তি ব্যবহার করে পুলিশ যেন তাঁদের খোঁজ না পায়, সে জন্যই এমন ব্যবস্থা।

মুঠোফোন নম্বর বদল ছাড়াও নিজেদের নিরাপত্তার জন্য রাতে দুটি দলে ভাগ হন আত্মগোপনে থাকা নেতা-কর্মীরা। একদল পাহারা দিলে আরেক দল বিশ্রাম নেয়।

এর বাইরে এলাকায় যারা বিএনপির সমর্থক আছেন, তাদেরও সতর্ক থাকতে বলা হয়। এলাকায় অপরিচিত কোনো লোক দেখলেই খবর জানানো হয়।

নিজেদের এমন জীবন নিয়ে ধৈর্যহারা হয়ে পড়ছেন বলে জানালেন পৌর যুবদলের সাবেক ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আক্তার হোসেন নিফা। বিষণ্ন কণ্ঠে বলেন, ‘আমরা অসহায় অবস্থায় আছি।

সকাল বেলা পুলিশ এলে, বিকেলে ডিবি। রাতে আসে আওয়ামী লীগের লোকজন। আমরা কেউ বাড়িঘরে থাকতে পারি না। সবার বাড়ি পুরুষশূন্য। মনে হয় মৃত্যু ছাড়া এই জুলুম থেকে বাঁচার উপায় নাই।’

উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সদস্যসচিব মেহেদী হাসান বলেন, ‘যুবক ছেলেদের বাড়িতে থাকতে দিচ্ছে না পুলিশ।

বাবা বিএনপি করে তাকে বাড়িতে না পেয়ে ছেলেকে ধরে নিয়ে যাচ্ছে। ভাইকে না পেয়ে আরেক ভাইকে ধরে নিয়ে যাচ্ছে। এ কারণে নেতাকর্মীদের ছেলেরাও ভয়ে বাড়িঘর ছাড়া।’

তিনি আরও বলেন, গত ২৮ অক্টোবরের পর থেকে এই উপজেলায় প্রায় ১০০ জন নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। ৮টি মামলার আসামি বিএনপির নেতাকর্মীরা।

এজাহারে নাম না থাকলেও আটকের পর ওই মামলার যেকোনো একটিতে গ্রেপ্তার দেখানো হচ্ছে। যার কারণে গ্রেপ্তার আতঙ্কে নেতাকর্মী ও তাদের যুবক ছেলেরা বাড়িছাড়া।

ঈশ্বরদী সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার বিপ্লব কুমার গোস্বামী বলেন, ‘পুলিশ অযথা কাউকে হয়রানি করছে না। কেউ বাড়িতে না থাকলে পুলিশ কী করবে?’ তিনি আরও বলেন, ‘যারা কলাবাগান কিংবা শ্যালো মেশিন ঘরে রাত কাটায়, তারা সেখান থেকে নাশকতার পরিকল্পনা করে এবং মহাসড়কে বাস্তবায়ন করে।’

খবরটি শেয়ার করুন..

Leave a Reply